পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে (আরএনপিপি) কর্মরত রাশিয়ানদের মালিকানাধীন সাব-ঠিকাদারি ফ্যাসিনেট বাংলাদেশ কোম্পানির চুরি হওয়া লোহার মুল্যবান তারসহ অন্যান্য মালামালসহ দুই চোরকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের পর দুপুরে তাদের পাবনা জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনিরুল ইসলাম। আটককৃতরা হলেন, উপজেলার চররূপপুর গ্রামের মৃত আবু সরদারের ছেলে মোঃ মজনু সরদার (৪৫) ও মোঃ মন্টু সরদার (৪০)।
এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তি রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) নয়ন কুমার সাহা সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নের চর রূপপুর গ্রামের তরিকুল ইসলামের ইট ভাটার পাশে পদ্মা নদীর চর হতে প্রকল্পের চুরি যাওয়া মালামালসহ দুই চোরকে আটক করেন। উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে পারমানবিক চুল্লির ভবন ও কুলিং টাওয়ারে টানা দেওয়ার লোহার তৈরি বিশেষ ক্যাবলের ৯ টি পুরাতন স্ট্রেন রোল ও ইস্পাতের বড় সাইজের বড় সাইজের মুল্যবান ধাতবপাত। যার আনুমানিক মুল্য কয়েক লক্ষ টাকা। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র রূপপুর নলগাড়ি, ফটুমার্কেট, লক্ষীকুন্ডার পাকুড়িয়া, বিরামপুর, এমপি মোড়, কুতুবমোড়, নবীনগর ও কুষ্টিয়ার তালবাড়ি, মোসলেমপুর এলাকার অন্তত ৫০-৬০ জন মিলে আরএনপিপির মালামাল চুরির সিন্ডিকেট রয়েছে। এরাই প্রকল্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রকল্পের দক্ষিণপাশ পদ্মানদী দিয়ে নৌকায় করে চুরিকৃত মালামাল নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।
একাধিক সুত্রমতে, আরএনপিপি থেকে মালামাল চুরি চক্রের সিন্ডিকেটকে বিশেষ আর্থিক চুক্তিতে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে সম্প্রতি নানা অপরাধে ডিপার্টমেন্টের নিকট অপরাধী হয়ে বদলী হওয়া এসআই কান্তি কুমার মোদক। এছাড়াও সম্প্রতি বদলী হয়ে যাওয়া লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য ও ইনচার্জ আকিবুল ইসলাম। সুত্র মতে, বদলী হয়ে যাওয়ার পরও চোর সিন্ডিকেটের নিয়মিতভাবে মাসোহারা নিতে আসেন এসআই কান্তি কুমার মোদক। এসআই কান্তির বদলির পর চোরাই মালামালসহ কয়েকজনকে ঘটনাস্থল থেকে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির বর্তমান ইনচার্জ এসআই নয়ন কুমার সাহা আটক করেছেন। কিন্তু আটককৃতরা মুলত হাজিরা ভিত্তিক চোর। মুল হোতারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এই ব্যাপারে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নয়ন কুমার সাহা জানান, পূর্বে কি হয়েছে সেটা আমি জানি না। অপরাধীদের সঙ্গে কোন আপোষ নেই। অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে দূঃখের বিষয় প্রকল্পের মালামাল চুরি হলেও কোম্পানির পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলা করতে চায় না। এই কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় মুল হোতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। ঈশ্বরদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, প্রকল্প থেকে চুরি যাওয়া মালামালসহ দুই চোরকে আটক করা হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। এই ঘটনায় পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।