নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। মঙ্গলবার বলিহার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এলাকাবাসীর আয়োজনে ঘন্টাব্যাপী এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তব্য দেন বলিহার ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন স্বপন, যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম রেজা, স্থানীয় বাসিন্দা জানে আলম, আব্দুল ওয়াহাব প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, বলিহারের রাজা বিমেলেন্দু রায়ের দান করা সম্পত্তির ওপর ১৯৬৯ সালে বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির নামে প্রায় দেড়শ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বড় বড় পুকুর রয়েছে। বিদ্যালয়ের সম্পদ থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে ১৫লাখ টাকা আয় হয়। কিন্তু আফজাল হোসেন ২০১১ সালে বলিহার দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে বিদ্যালয়ের সম্পদ নয়-ছয় করে আসছেন। বিদ্যালয়ের নামে থাকা পুকুর ও ধানী জমি লিজ দিয়ে আয় হওয়া টাকার কোনো হিসাব না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নিজের পছন্দের লোককে সভাপতি বানিয়ে স্বেচ্ছাচারি ভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করায় অনেককে হুমকি-ধামকি এমনকি পেটুয়া বাহিনী দিয়ে মারধর করার ঘটনাও ঘটিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়া গত ১৫-১৬ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন অর্থের বিনিময়ে বিদ্যালয়ে কর্মচারীর বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। দুর্নীতিগ্রস্থ এই প্রধান শিক্ষককে অপসারণ না করা হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
বলিহার ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রধান শিক্ষক তৎকালীন পকেট কমিটিকে নিয়ে বিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা হরিলুট করেছেন। বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কোন দৃশ্যমান উন্নয়নই করা হয়নি। শুধুমাত্র সরকারের পক্ষ থেকে যেটুকু উন্নয়ন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের নামে থাকা ছয়টি পুকুর লিজ দেওয়া নিয়ে প্রধান শিক্ষক নানা তালবাহানা করছেন। গতকাল সোমবার প্রকাশ্যে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে বিদ্যালয়ের পুকুর লিজ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়েই আসেননি। গত ১৫-১৬ বছরের আবারও আফজাল হোসেন অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ের পুকুরগুলো গোপনে লিজ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। কিন্তু এলাকাবাসী সেটা হতে দেবে না।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন বলেন, এলাকাবাসীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বের মূল কারণ হচ্ছে এই বিদ্যালয়ের সম্পদ। এই বিদ্যালয়ের নামে প্রায় দেড়শ বিঘা সম্পদ রয়েছে। অতিতে যারা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন তাদের কথামতো চলতে হয়েছে প্রধান শিক্ষককে। ৫আগস্টের পর বিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। এই কমিটির লোকজন যা বলবেন সেভাবেই প্রধান শিক্ষককে চলতে হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে জানান এলাকাবাসীর এমন অভিযোগগুলো মিথ্যে ও বানোয়াট। বিদ্যালয়ের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। বিগত সময় আন্দোলনকারীরা বিদ্যালয়ের অর্থ ভোগ করতে পারেনি তাই তারা এখন এসে আন্দোলন করছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইবনুল আবেদীন জানান লিখিত ভাবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।