রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
শিরোনাম
কুড়িগ্রামে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত তাহিরপুরে হত্যাকাণ্ডের জেরে প্রতিপক্ষের ১৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটতরাজ। নীলফামারী-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন; জনগণের প্রত‍্যাশায় শাহরিন ইসলাম চৌঃ তুহিন হত্যা মামলার আসামিদের বিচারের দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ নকলের দায়ে আমতলীতে ৯ ফাজিল পরীক্ষার্থী বহিষ্কার পোরশায় ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছি, ছোট্ট মেয়েটি আত্রাইয়ে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত রাজশাহীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে র‌্যালী ও আলোচনা সভা জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে একজনের মৃত্যু নওগাঁয় রেলগেটের যানজট নিরসনের দাবীতে স্থানীয়দের মানববন্ধন

জনতা ব্যাংক’র ব্যবস্থাপক কর্তৃক আত্মসাত ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচ করলেন যেভাবে

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ঈশ্বরদী, (পাবনা) প্রতিনিধিঃ / ১২৭ বার পঠিত
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ৬:২০ অপরাহ্ণ
জনতা ব্যাংক’র ব্যবস্থাপক কর্তৃক আত্মসাত ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচ করলেন যেভাবে

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ঈশ্বরদী, (পাবনা) প্রতিনিধিঃ

পাবনার ঈশ্বরদীতে গ্রাহকদের দেওয়ার কথা বলে জনতা ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে উত্তোলিত ১ (এক) কোটি ৩০ (ত্রিশ) লাখ টাকা নিয়ে জনতা ব্যাংক পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) খালেদ সাইফুল্লাহ কচি (৪৫) নিখোঁজ হওয়ার ৭ দিন পার হলেও খোঁজ মেলেনি। তবে ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ ব্যাংকের টাকা কোথায় ও কিভাবে খরচ করেছেন তার কিছু অংশ জানা গেছে।

গত রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে জনতা ব্যাংক ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখা ও দাশুড়িয়ার পিলএসসি শাখা থেকে নেওয়া ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি পাকশী শাখায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন খালেদ সাইফুল্লাহ। তিনি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার আব্দুল গফুর শেখের ছেলে।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংকের পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) খালেদ সাইফুল্লাহ অন লাইন জুয়া ও রাজশাহী শহরে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্ল্যাট বাড়ি ক্রয় করেন। এতে তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকা দেনায় পড়ে যান। পাওনাদারদের চাপে পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে তিনি ব্যাংকের গ্রাহকদের চেকের প্রেমেন্ট দিতে জনতা ব্যাংক দাশুড়িয়া পিএলসি ও ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখা থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন।

জনতা ব্যাংক ঈশ্বরদী করপোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোঃ মোহছানাতুল জানান, ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ক্যাশ রেমিট্যান্সের জন্য প্রয়োজনীয় ভাউচার ও রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর সম্পন্ন করার পর ৫ অক্টোবর বেলা পৌনে ১২ টার দিকে খালেদ সাইফুল্লাহর নিকট ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হয়। টাকা নিয়ে তিনি আনসার সদস্য মাহবুবকে সঙ্গে করে পাকশী শাখার উদ্দেশ্যে প্রাইভেট কারযোগে রওনা দেন। গাড়িটির চালক ছিলেন মোঃ ইসমাইল হোসেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান খালেদ সাইফুল্লাহ ।

এদিকে বিভিন্ন সুত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনতা ব্যাংক পাকশী পিএলসি শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ রাজশাহীতে ফ্ল্যাট ক্রয়, তেলের ব্যবসার কথা বলে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহক, প্রতিবেশি ও শুভাকাঙ্খিদের নিকট থেকে নিয়ে কয়েক কোটি টাকা ঋণ গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। এই কারণে সুকৌশলে ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি জনতা ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা গ্রহন করেন। সেই টাকা থেকে ওই দিনই পাবনা জজ কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট হেদায়েতুল্লাহ হককে ১৫ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকে এক লাখ টাকা, বিএনপি নেতা ফুল ব্যবসায়ী জুয়েল এবং আরমানকে দুই লাখ টাকা, উপজেলার লক্ষীকুন্ডার পাকুড়িয়ার গ্রামের ডালিয়া বেগমকে ৫ লাখ টাকা, পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের ইস্তা এলাকার সিএনজি ড্রাইভার হাফিজুল ইসলামকে ৯ লাখ টাকা প্রদান করেন।

এছাড়াও শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে ব্যবসার কথা বলে দুই লাখ টাকা, কারুপল্লী রেস্টুরেন্টে বসে ৪ জনের পাওনা পরিশোধ করেন। থানা গেট সংলগ্ন বাটার ফ্লাই কোম্পানির শো রুমে ও শহরের হান্নানের মোড়ের মুদিসহ বেশ কিছু পাওনাদারকে টাকা প্রদান করেন। সুত্রমতে যাদের টাকা দেওয়া হয়েছে তারা সবাই খালেদ সাইফুল্লাহ নিকট পাওনাদার। সুত্রগুলো মতে, রাজশাহী শহরে খালেদ সাইফুল্লাহ ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। ব্যাংক থেকে আত্মসাতকৃত টাকা থেকেই ওই ফ্ল্যাটের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাটার ফ্লাই কোম্পানির ঈশ্বরদী শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আবু সায়েম জানান, ছুটি থাকায় ঘটনার দিন তিনি শো রুমে ছিলেন না। তাদের শো রুমের সঙ্গে খালেদ সাইফুল্লাহ লেনদেন রয়েছে। সেই কারণে তিনি শো রুমে আসতে পারেন।

রেলগেটস্থ খায়রুজ্জামান বাবু বাস ট্রামিনাল থেকে খালেদ সাইফুল্লাহ নিকট থেকে ৫ লাখ টাকা গ্রহণকারী উপজেলার লক্ষীকুন্ডার পাকুড়িয়া এলাকার ডালিয়া খাতুন জানান, তারা ম্যানেজার খালেদ সাইফুল্লা ওরফে কচির থেকে মোট ১২ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু সেই টাকার বিপরিতে ওইদিন ৫ লক্ষ টাকা তাকে প্রদান করেছেন। বিএনপি নেতা ফুল ব্যবসায়ী জুয়েল জানান, প্রতিবেশি হওয়ায় খালেদ সাইফুল্লাহ নিকট ১ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। আরমান নামের আরেকজনের নিকট থেকেও এক লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। তাদের দুইজনের ধারের টাকা পরিশোধের জন্য তার হাতে দুই লাখ টাকা দেন খালেদ সাইফুল্লাহ।

এ ব্যাপারে ৯ লাখ টাকা গ্রহনকারী সিএনজি চালক হাফিজুল ইসলাম নিজেকে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ঈশ্বরদী শাখার সদস্য পরিচয় দিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি হাফিজুর রহমান জানান, অভিযুক্ত সিএনজি চালক হাফিজুর আমাদের প্রেস ক্লাবের কেউ নন।

এব্যাপারে পাবনা জর্জকোর্টের আইনজীবি এডভোকেট হেদায়েতুল্লাহ হক জানান, জনতা ব্যাংক পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে কচির বাড়ি তাঁর বাড়িরপাশে। সুসম্পর্কের জের ধরে তেলের ব্যবসার কথা বলে তার কাছ থেকে খালেদ সাইফুল্লাহ বেশ কিছু টাকা ধার নিয়েছেন। সেই ধারের টাকার একটি অংশ হিসেবে কিছু টাকা সেদিন খালেদ তার স্ত্রীর নিকট দিয়ে গেছেন।

এই আইনজীবি আরো জানান, পত্রপত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি ব্যাংকের রাষ্ট্রীয় টাকা আত্মসাত করে খালেদ সাইফুল্লাহ তাকে টাকা দিয়েছেন। তখন তিনি জনতার ব্যাংকের ঈশ্বরদী কর্পোরেট শাখার মহা-ব্যবস্থাপককে লিখিতভাবে জানিয়ে সেই টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন।

আইনজীবি হিসেবে এডভোকেট হেদায়েতুল্লাহ হক জানান, এটা রাষ্ট্রীয় টাকা। মামলা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা যার নিকট থেকে এই টাকা উদ্ধার করবেন আইনগতভাবে তিনিই টাকা আত্মসাতকারী মামলায় আসামী হবেন।

জনতা ব্যাংক ঈশ্বরদী করপোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোঃ মোহছানাতুল জানান, ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়ায় জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে এডভোকেট হেদায়েতুল্লাহ হককে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়া পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহকে খুঁজে বের করতে তিনটি দল মাঠে কাজ করছেন। তাকে ধরতে পারলেই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানা যাবে। তবে ঈশ্বরদী থানা ও দূর্নীতি দমন কমিশন (দূদক) পাবনার কার্যালয় সুত্র জানান, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন, মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপনে থাকা, তার পরিবারের সদস্যদের আচরণ ও পাওনাদারদের টাকা প্রদানের প্রমান দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে জনতা ব্যাংক পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ ব্যাংকের টাকা আত্মসাত করেছেন।

এব্যাপারে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ.স.ম আব্দুন নূর জানান, বিষয়টি থানার এখতিয়ারভুক্ত না হওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দুদকের নিকট অভিযোগটি প্রেরণ করা হয়েছে।

দূর্নীতি দমন কমিশন (দূদক) পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাধন সুত্রাধর জানান, ব্যাংকের ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে নিখোঁজ থাকা ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ ব্যাপারে পাওয়া অভিযোগটি ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্ধারণ হলেই তদন্ত শুরু করা হবে।

Facebook Comments Box


এই ক্যাটাগরির আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর